ছেড়া টাকা

 

আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি, আমাদের গ্রামে রাস্তায় কাজ চলিতেছে রাস্তা নতুন পাকা করা হবে তাই ইট ভাঙ্গার কাজ চলিতেছে। আমার গ্রামের এক বৃদ্ধ মানুষ সেও ইট ভাঙ্গার কাজ করে। সারা দিন কাজ করার পরে যারা কাজ করেছে তারা প্রত্যেকে হাজিরা বাবদ পাবে ৫০০ টাকা করে। সেখানে ১০ জনের মতো কাজ করেছে। সন্ধার সময় কন্টাক্টর সবাইকে হাজিরা টাকা দিয়ে চলে যায়। সন্ধার সময় লোকটা বাজারে যায় বাজার করার জন্য। সারা দিন কাজ করে হাতে ৫০০ টাকার নোট পেয়ে সে খুব খুশি কারন তার ঘরের অনেক কিছু কিনতে পারবে। লোকটি বাজারে গিয়ে চাল, ডাল, মরিচ-হলুদের গুড়া কেনে। দোনকদারকে ৫০০ টাকা দিতেই দোকানদার টাকা ঘসামাজা শুরু করে তখন দোকানদারের চোখে পরে টাকাটা ছেড়া আর গাম দিয়ে জোরা দেয়া। টাকাটা দোকানদার নিতে চায় না। সে বৃদ্ধ লোকটিকে বলে টাকা পালটাইয়া দিতে। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটির কাছে আর টাকা নাই। তাই সে টাকাটা পালটাইয়া দিতে পারে নাই। তাই দোকানদার বৃদ্ধকে টাকা ফেরত দিয়ে তার মাল রেখে দেয়। তখন বৃদ্ধের মনটা খরাপ হয়ে যায়। সে হতাশ হয়ে পরে আর কষ্টে তার বুক ফেটে যাওয়ার পালা। বৃদ্ধ লোকটি মনে মনে ভাবে যে, সারা দিন কাজ করে টাকা পেলাম আর সে টাকা আমার কাজে লাগলো না। সে মন খারাপ করে টাকার দিকে বার বার তাকায় তার বাড়ির দিকে যায়। 

এখন আসি মুল কথায় ছেড়া টাকা কি চলে না। টাকা ছিড়ে গেলে কি সে টাকা আর নেওয়া হবে না। তাহলে কেন ঢাকায় ছেড়া টাকার মার্কেট আছে। আর গ্রামে বা অন্য কোন যায়গায় ছেড়া টাকা নিয়ে এতো দন্ধ। সরকার কি ছেড়া টাকা কি অচল বলে ঘোষনা করেছে। 
ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা ব্যাংক নোট বা টাকা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ‘ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণ করা হয়’ এমন বিজ্ঞপ্তি শাখার দৃশ্যমান স্থানে ও রঙিন অক্ষরে লিখে টানানোর জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয় ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় সহজে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে ‘ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণ করা হয়’ এমন বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন করতে হবে এবং এ–সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, এই নির্দেশনা ব্যাংকের সব শাখা মানছে না। ফলে জনসাধারণ তফসিলি ব্যাংকের শাখাগুলো থেকে ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট বিনিময়–সংক্রান্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য ব্যাংকের সব শাখায় ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট–সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় আবশ্যিকভাবে কাউন্টারের সামনে বা জনসাধারণের সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে ২০ ফন্টে রঙিন কালিতে লিখিত বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন করতে হবে।

তার পরেও আমাদের দেশে কেন ছেড়া-ফাটা নোট নেওয়া হয় না। কেন কোন দোকানে ছেড়া ফাটা নোট দিলে তা দেওয়া হয় না। আসলে বাংলাদেশের সব ব্যাংক গুলোতে এই নির্দেশনা এখন পালন করে না। আর কিছু কিছু ব্যাংকে এই নির্দেশনা মানলেও তারা ছেড়া-ফাটা নোটের পরিবর্তন করে ১০০ টাকায় ৫-১০ টাকা কমিশন কাটবে মানে কম পাবে। আসলে কি সরকার ছেড়া-ফাটা নোট পরিবর্তনের জন্য কোন কমিশন নিতে বলেছে। না বাংলাদেশ ব্যাংক এমন কোন নির্দেশনা দেয়নি যে কোন ছেড়া-ফাটা নোট ব্যাংকে জমা দিলে কিছু টাকা কম ফেতর দিতে হবে। কিন্তু তার পরেও অনেক ব্যাংকে ছেড়া-ফাটা নোট জমা দিলে তারা টাকা কম দেয়। 
 সে কারনে আর কেউ ব্যাংকে যায় না ছেড়া-ফাটা নোট পরিবর্তন করতে। আর সে কারনে কেউ ছেড়া-ফাটা নোট নিতে চায় না।
ছেড়া-ফাটা নোট কারো কাছে থাকলেও তা চালাতে হয় ট্যাপ মেরে বা গাম ব্যবহার করে। আর সেই ছেড়া টাকা কাউকে দেওয়ার পরে তার পরতে ইউনুছ দোয়া। কেন এভাবে ছেড়া টাকা চালাতে হবে। কেন ছেড়া টাকা লেনদেন করা যাবে না। সরকার কি ছেড়া-ফাটা নোট অচল বলেছে। বলে নাই বললে কি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের সিঁড়ির সামনের ফুটপাতে এ হাটটি চলে আসছে। কম দামে টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা, নতুন টাকার বিনিময়ে ছেঁড়া ও পুরান টাকা বিক্রি হচ্ছে এ ফুটপাতে।
গুলিস্তানের অর্ধশতাধিক মানুষ টাকা বেচা-বিক্রির ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসা দিয়ে ঘর-সংসার চলে সবার। 
ব্যবসায়ীরা জানান, ছেঁড়া টাকা নিয়ে অনেকেই বেকায়দায় পড়েন। যারা এই ছেঁড়া টাকা চালাতে পারে না তাদের কাছ থেকে টাকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে নোটগুলো কিনে নেন। এছাড়া নতুন নোটের বান্ডেলও তারা বিক্রি করেন। 
এখন কথা হলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ছেড়া-ফাটা টাকার ব্যবসা চলে তাই লোকেরা টাকা পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের আর কোন জেলায় তো টাকার ব্যবসা চলে না তাহলে তারা কি ছেড়া-ফাটা নোট গাম দিয়ে আর ট্যাপ দিয়েই চালাবে। আর যখন সে এই ছেড়া-ফাটা টাকা অন্য কাউকে দিবে তখন সে মনে মনে ইনুছ দোয়া পড়তে থাকবে যাতে ধরা না পরে টাকাটি ছেড়া। আর যদি কোন রকমে চালাতেই পারে আর সেখানে সে দ্বোরাবে না যাতে যাকে সে ছেড়া টাকাটি দিয়েছে সে যেনো তাকে খুজে না পায়। 
বর্তমানে তো ছেড়া টাকা গাম বা ট্যাপ মেরে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের দিচ্ছে। যেখানে ব্যাংক থেকে  ছেড়া টাকা পরিবর্তন করে দিবে সেই ব্যাংক থেকেই এখন গ্রাহকদের টাকার বান্ডিলের মধ্যে ছেড়া টাকা দিয়ে দিচ্ছে সুধু ছেড়া টাকা না বর্তমানে নাকি ব্যাংকে জাল টাকা দিচ্ছে। গ্রাহেকদের টাকার বন্ডিলের মধ্যে ব্যাংকের কর্মচারিরা ছেড়া টাকা বা জাল টাকা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। 
তাহলে কি ছেড়া টাকা নিয়ে এভাবে সব সময় বিপদে পরতে হবে আমাদের। তাহলে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়া-ফাটা টাকার উপর নির্দেশনা দিয়েছে। 
আমরা চাইলেই কিন্তু অনায়াসে ছেড়া টাকা পরিবর্তন করতে পারি। যদি আমাদের কাছাকাছি কোন ব্যাংক থাকে তাহলে আমরা ব্যাংক গিয়ে ছেড়া টাকা পরিবর্তন করতে পারি। যদি কোন ব্যাংক আামাদের টাকা পরিবর্তন করে দিতে না চায় বা কমিশন চায় তাহলে আমরা সেটার প্রতিবাধ করতে পারি আমাদের হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে। আমাদের সবার মোবাইলে ক্যামেরা আছে আর আছে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ড। আর যেখানে কোন ব্যাংক কাছে নাই তারা কি ভাবে পরিবর্তন করবে। এটা একটি বড় বিষয় যেখানে কাছাকাছি কোন ব্যাংক নেই সেখান কিভাবে ছেড়া টাকা পরিবর্তন করবে। ছেড়া টাকা কোন দোকানে দিলে তো দোকানদার সেই টাকা ফেরত দিবে। আর যদি দোকানদার না দেখে তাহলে তো কথাই নাই। আর দুই দিনেরও  সে দোকানের কাছেও আসা যাবে না। কারন দোকানদার দেখলেই তো গালাগাল শুরু করবে। তাহলে আমরা কি ভাবে ছেড়া টাকা চালাবো। আমরা চাইলেই ছেড়া টাকা অনায়াছে চালাতে পারি এতে গাম বা ট্যাপ ব্যবহার করতে হবে না। আর না পেড়তে হবে ইউনুছ দোয়া। 
তাহলে কি ভাবে আমরা ছেড়া টাকা চালাবো।
একজন সাধারন মানুষ কোন দোকানদারকে ছেড়া টাকা দিলে সে টাকা রাখবে আর তার বিনিময় পন্য দিবে। এখন কথা হলো দোকানদার ছেড়া টাকা রেখে কি করবে। হ্যা তার উত্তর আছে, দোকানদার দিবে কোম্পানির লোকের (এস.আর) কাছে। কোম্পানির লোকেরা (এস.আর) যখন দোকানে মালের বাবদ টাকা নিতে আসে তখন সেই দোকানদার ছেড়া-ফাটা নোট কোম্পানির লোককে (এস.আর) দিবে। কোম্পানির (এস.আর) লোক টাকা নিয়ে কি করবে।
আমরা জানি সব কোম্পানির ডিলারসিপ বা নিজেস্ব এজেন্ট থাকে। আর তারা মালের বিক্রির টাকা হাতে হাতে না কোম্পানির কাছে পৌছায় ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশের সব কোম্পানির লেনদেন হয় ব্যাংকে। তাই কোম্পানির লোকেরা দোকানদারের কাছ থেকে যে টাকাই নেয় সবই ব্যাংকের মাধ্যমে কোম্পানির কাছে পৌছায়। তাই কোম্পানির লোক যদি দোকানদারের কাছ থেকে ছেড়া টাকা নেয় সে টাকাটা ব্যাংক দিতে পারে। 
এখন কথা হলো ব্যাংক যদি না নেয় তাহলে। 
ব্যাংক কেন নিবে না। কারন ব্যাংক তো নিতে বাধ্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েই দিয়েছে। কোম্পানির লোক একটু চাপ দিলেই তো ব্যাংক টাকা নিবে। আর না নিলে তো ক্যামেরা সবার সাথেই আছে। আর সোশ্যাল মিডিয়া। 
এভাবেই আমরা ছেড়া-ফাটা নোট ব্যবহার করতে পারি। আর কোন লোক ছেড়া-ফাটা নোট হাতে পেয়ে আপসোস করবে না। আর কেউ ছেড়া-ফাটা নোট চালাতে গিয়ে পাপ করবে না আর মনে মনে পড়তে হবে না ইউনুছ দোয়া। 

0 Comments

Stories are made up of my own feelings and events that have happened to me.

My writing habit, I write everything down so that everyone can read what I wear.