“হিজড়া বা উভয় লিঙ্গের মানুষ”


“হিজড়া” একজন মানুষ তবে সে কি তার সে পরিবয় দিতে পারে না। সে কি নারী নাকি পুরুষ তার কোন নিদিষ্ট পরিচয় নেই। হিজড়াদের জন্ম হয় সাভাবিক ছেলে বা মেয়েদের মতই। তারাও মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে।  সাধারনত কোন ছেলে বা মেয়ে জন্ম গ্রহনের পরিবারের সবাই যেমন তাকে খুশিতে মেনে নেয় কিন্তু যদি কোন মায়ের গর্ভে হিজড়া সন্তান জন্ম নেয় তাহলে তাকে তার পরিবারের কোন জন খুশিতে মেনে নেয় না। মা তার হিজড়া সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকেই দুঃখ পায় আর পরিবারের লোকেরা সেই মাকে গালি গালাস করতে থাকে। কেউ কেউ বলে পাপের ফল। হয়তো এই মহিলা কোন পাপ করেছে তার ফল হিসাবে এই হিজড়া সন্তান জন্ম গ্রহন করছে। এমনও শোনা গেছে কোন মা যদি হিজড়া সন্তান জন্মদিছে তাহলে সেই মাকে সহ তার সন্তানকে ছূড়ে ফেলে দিছে তার পরিবারের লোকজন। আসলে কেন পরিবারের লোকেরা তার এই হিড়জা সন্তানটিকে মেনে নিতে পারে না কারন সমাজের ভয়ে। আমাদের সমাজে হিজড়াদের কোন দাম নেই।

একটি হিজড়া সন্তান ছোট থেকে বড় সমাজের গ্লানি সহ্য করে। আমাদের সমাজ তাকে মেনে নিতে পারে না। এর এই সমাজের নিয়মের বেড়াজালে পরে তার ঠাই হয় কোথায় তা আমাদের কারো অজানা নয়। 

আমি ইউটিউবে ভিবিও দেখতেছিলাম তখন একটি হিজড়ার জিবনী নিয়ে দেখলাম। সে কিভাবে বড় হইছে , ছোট সময় তার সাথে তার আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পারাপ্রতিবেশীরা কি ভাবে আচরন করতো। 

সে বলেছিলো; ছোট বেলায় সে মায়ের আদোর তেমন পেলেও বাবার তেমন আদোর যায়নি। চাচাতো, ফুফাতো ভাই বোনেরা তার সাথে মিসতে চাইতো না। একনকি চাচা, ফুফুরাও তাকে দেখতে পারতো না। সে যখন স্কুলে যেতো সে ছেলেদের কাছে বা মেয়েদের কাছে কারো কাছেই বসতে পরতো না। সবাই তাকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতো। তাই সে ঘড় থেকে বেড় হতে চাইতো না। সে নিজে নিজে ভাবতো আল্লাহ কেন তাকে এভাবে জন্ম দিয়েছে সে তার পরিবারের লোকের কাছে ভালোবাসা পায় না, আত্মীয় স্বজন তাকে ভালোবাসে না, পাড়া প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে নানা কথা বলে। 

বর্তমানে একজন হিজড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় তাকে নিয়েও অনেক সমালোচনা হয়েছে। প্রকাশ্যে গোপনে অনেক কথা বলেছে লোকে। 

এখন কেন হিজড়াদের সাথে মানুষ এমন আচারন করে। তাদের নিয়ে সমালোচনা করে। আসলে হিজড়া কি মানুষ না?

হিজাদের নিয়ে আমি অনেক লেখালেখি দেখেছি তার মধ্যে কিছু কথা তুলে ধরা যাক। 


“বার্তা-24” এই পত্রিকায় লেখা হয়েছেঃ-

মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহর কাছে মানুষের বাহ্যিক আকার-আকৃতির কোনো মূল্য নেই। হাশরের ময়দানে তিনি দেখবেন শুধু মানুষের আমল। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা এবং সম্পদ দেখেন না বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমলসমূহ দেখেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৭০৮

ইসলামি স্কলাররা মতে দিয়েছেন, হিজড়াদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের গালি দেওয়া যাবে না। তাদেরকে নিয়ে উপহাস করা যাবে না। তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করবে। তাদের ওপর ইসলামের বিধান কার্যকর হবে। যার মধ্যে মেয়েলি ভাব বেশি তার ওপর নারীদের বিধান এবং যার মধ্যে পুরুষের স্বভাব বেশি বিদ্যমান, তার ওপর পুরুষদের বিধান কার্যকর হবে।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। তাই ইসলাম হিজড়াদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অঙ্গ ও আকৃতির ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়নি। আল্লাহতায়ালার কাছে সব ত্রুটিহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ মানুষই সমান এবং হাশরের ময়দানে সব ধরনের মানুষই জিজ্ঞাসিত হবে। সে জন্যই সকলের মতো নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত- পালন করা হিজড়াদের ওপর ফরজ।

ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। ইমান ও তাকওয়া হচ্ছে- মানুষের মর্যাদার মানদণ্ড। যে যত বেশি মুত্তাকি, আল্লাহ তাকে তত বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে; পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি মুত্তাকি।’ -সুরা হুজুরাত : ১৩



“আলোকিত বাংলাদেশ” এই পত্রিকায় লেখা হয়েছেঃ-

হিজড়ারাও পূর্ণাঙ্গ মানুষ

নারীও নয়, পুরুষও নয়; এ ধরনের এক শ্রেণিকে প্রায়ই রাস্তাঘাটে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। সভ্য সমাজে অবহেলিত এ শ্রেণিকে ‘হিজড়া’ বলা হয়। ইসলামে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে হিজড়া, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ লিঙ্গ বলতে কিছু নেই। এদের ইসলাম মানবসন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মানবসন্তানদের মতো তাদের বিধান দেওয়া হয়েছে। সমাজে হিজড়াদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ইসলাম পথনির্দেশক। ইসলামই হিজড়াদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম সুন্দর আকৃতিতে।’ (সুরা ত্বিন : ৪)।

হিজড়ারা সমাজে অবহেলিত

আমাদের সমাজে পর্যাপ্ত ইসলামি জ্ঞান না থাকায় এবং নানা কুসংস্কার, সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক দৈন্যতার কারণে হিজড়ারা বঞ্চিত ও অবহেলিত। ক্ষেত্র বিশেষ নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার। তাই ইসলামি বিধানমতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা এবং সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমল দেখেন।’ (মুসলিম : ৬৭০৮)।

মানুষের জন্ম ও দৈহিক অবয়ব আল্লাহর দান

হিজড়া সম্প্রদায়ও আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। তারাও সৃষ্টির সেরা জীব। প্রতিবন্ধীদের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে, এটিও তেমন এক ত্রুটি। তবে এর কারণে তাদের মনুষ্য সমাজ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীর মতোই তারাও স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাদের প্রতি ঘৃণা, দুর্ব্যবহার, খারাপ মন্তব্য করা গোনাহের কাজ। তাদের গালি দেওয়াও মহাপাপ। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা জঘন্য অপরাধ। তাদের এ দুর্বলতার কারণে তাদেরকে ঠাট্টা করার মানে হলো, আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকে ঠাট্টা করা। আল্লাহর সৃষ্টিকে হাসি-তামাশার বিষয় বানানো গর্হিত কাজ। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জন্ম ও দৈহিক অবয়ব সম্পূর্ণ আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে যেভাবে খুশি সৃষ্টি করেন। দৈহিক পূর্ণতা ও অপূর্ণতা তার ইচ্ছাধীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) যা যেভাবে ইচ্ছে সৃষ্টি করেন।’ (সুরা শূরা : ৪৯)।

আল্লাহর কাছে সব ত্রুটিহীন বা ত্রুটিপূর্ণ মানুষ সমান

বাংলাদেশে বেশিরভাগ হিজড়া মুসলিম। কোনো না কোনো মুসলিম পরিবারে তাদের জন্ম। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামি রীতিনীতিই তাকে মেনে চলতে হবে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী হিজড়াদের ইসলামবহির্ভূত কর্মকা-ে লিপ্ত করে রাখছে, যা বেদনাদায়ক। দুঃখজনক সত্য হলো, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো মর্যাদা নেই। তারা আজ অবহেলিত। ইসলাম মানুষ হিসেবে হিজড়াদের প্রাপ্য সম্মান দিতে এবং নামাজের জামাতসহ সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকা-ে তাদের অংশগ্রহণ অনুমোদন করেছে। কোরআন-হাদিসে অঙ্গ ও আকৃতির ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়নি। আল্লাহতায়ালার কাছে সব ত্রুটিহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ মানুষই সমান। হাশরের ময়দানে সবাই জিজ্ঞাসিত হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। ঈমান ও তাকওয়া হচ্ছে মানুষের মর্যাদার মানদ-। যে যত বেশি মুত্তাকি, আল্লাহ তাকে তত বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে। যেন তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি মুত্তাকি।’ (সুরা হুজুরাত : ১৩)।

হিজড়াদের জীবনযাপন নিশ্চিতকরণ ও উত্তরাধিকার প্রদানের নির্দেশ

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী হিজড়ারা সাধারণ মানুষের মতোই তাদের পূর্ণ অধিকার লাভ করবে। লেখাপড়া, শিক্ষাদীক্ষা, চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ধর্ম-কর্ম, সামাজিক ও উন্নয়ন কাজের সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রেই তাদের ন্যায্য অধিকার ইসলাম প্রদান করেছে। ইসলাম হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে ও তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী তারা মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। যে হিজড়ার মধ্যে নারী বা পুরুষ কোনো একটি প্রকৃতি প্রবল, সে নারী বা পুরুষের হিসেবে উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে। আর যার প্রকৃতি সহজে নির্ধারণ করা যায় না, তার ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হবে। (সুনানে বায়হাকি : ১২৯৪)।


বিবিসি নিউজ বাংলায় বলা হয়েছেঃ- 

বাংলাদেশে হিজড়াদের পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ পেতে জটিলতা কেন

বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যেন বাবা-মায়ের সম্পত্তির সমান ভাগ পান, সেজন্য আইন মন্ত্রণালয় মুসলিম শরিয়া আইন এবং সংবিধানের আলোকে একটা উপায় বের করার চেষ্টা করছে।

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্তু হিজড়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশে কোন আইনেই স্পষ্ট করে কিছু বলা নাই।

তারা আরও বলেছেন, বাংলাদেশের আইন এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে জটিল এবং স্পর্শকাতর এই বিষয়ে সরকার আসলে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেবে বা সহসাই কোন সমাধান হবে-এ ব্যাপারে তারা আস্থা রাখতে পারছেন না।

বাধা কোথায়?

জয়া শিকদার হিজড়া হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার এক ভাই এবং দুই বোন মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ পেয়েছেন। কিন্তু তিনি সম্পত্তির ভাগ না পাওয়ার পেছনে আইন এবং সমাজকে বড় বাধা হিসাবে দেখেন।

তিনি বলেছেন, "আমার বাবার কাছে আমি যখন সম্পত্তি চেয়েছি, সে আমাকে বলে যে তোমাকে কোন পরিচয়ে আমি সম্পত্তি দেবো। আমার নারী স্বভাব রয়েছে। আমার বাবা আমাকে বলে, তুমি নারী পরিচয়ে বা নারীর পোশাক পরে আমার কাছে সম্পত্তি নিবা, সেটা আমার সমাজ গ্রহণ করবে না।"

"আমার বাবা আরও বলে যে, তোমারতো কোন সংসার নাই। তুমি সম্পত্তি দিয়া কি করবা? তার এক কথা সে দেবে না।"

জয়া শিকদার এখন সম্পত্তিসহ সমাজের সবক্ষেত্রে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেন।

তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন এবং হিন্দু ধর্ম আইন- যেসব আইনে পরিবারিক সম্পত্তি ভাগ করে দেয়া হয়, কোন ধর্মের আইনেই হিজড়ারা সম্পত্তির ভাগ পাচ্ছে না। পরিবারের সদস্যরা আইনের সুযোগ নেয়। এছাড়া পরিবারের সদস্য এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক নয়।"

মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্ট এর হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার সম্পর্কিত বিভাগে কাজ করেন শোভা সরকার। তিনি নিজেও একজন হিজড়া।

একজন বন্ধুর সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, তার বন্ধু হিজড়া হওয়ার কারণে সেই লড়াইয়ে আইন এবং সমাজ কোন দিক থেকেই সমর্থন না পেয়ে তাদের হার মানতে হয়েছিল।

শোভা সরকার জানিয়েছেন, পরিবারের সম্পত্তিতে তার সেই বন্ধুর কোন অধিকারই ছিল না। বাবার সম্পত্তির ভাগ চাইলে ভাই বোনেরাই তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তখন নিরাপত্তার অভাবে তার বন্ধু সম্পত্তির দাবি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, মামলা করে কোন লাভ হবে না- এমন ধারণা থেকে তিনি আইনগত পদক্ষেপও নেননি।

মুসলিম আইন কি বলছে

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগির ক্ষেত্রে দেশটির প্রেক্ষাপট মিলিয়ে তাদের স্ব স্ব ধর্মের আইন ব্যবহার হয়ে থাকে।

ইসলাম ধর্মের মানুষের সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের আওতায়।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ১৯৬১ সালের মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে। সেই আইনে হিজড়াদের সম্পত্তির ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

"মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। সন্তান মানে পুত্র এবং কন্যারা সম্পত্তির ভাগ পাবেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান এই আইনে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে বলা নাই। তবে বিভিন্ন দেশে ইসলামী আইন বিশারদরা হিজড়াদের সম্পত্তির ভাগ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং অনেক দেশে তা অনুসরণও করা হয়।"

তাজুল ইসলাম মনে করেন এ ব্যাপারে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

"পাকিস্তানের একটা প্রদেশে ইসলামী আইন বিশারদরা গবেষণা করে একটা ফতোয়া দিয়েছেন, যে হিজড়া সন্তানদের মধ্যে পুরুষ ভাবটা প্রবল, তাদেরকে পুরুষ সন্তান হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। আর যাদের মাঝে নারীর স্বভাব বেশি, তাদের কন্যা সন্তান হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এমন লক্ষণ বিবেচনা করে উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তির ভাগ সেখানে হয়।

''তবে এ ব্যাপারে বিশ্বে ইসলাম বিশারদদের সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্ত এখনও নেই। একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।"

তিনি জানিয়েছেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী, খৃস্টান এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকারের প্রশ্নে কিছু বিধি বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে। কিন্তু সে সব ধর্মেও হিজড়াদের সম্পত্তির অধিকারের ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলা নাই।

হিন্দু আইনে জটিলতা

বাংলাদেশে হিন্দু আইনে ঐ ধর্মবলম্বীদের জন্য সম্পত্তির ভাগাভাগি যেভাবে হয়, তাতে কন্যা সন্তানরাই বিয়ের পর বাবার সম্পত্তির ভাগ পান না। সেখানে হিজড়াদের ব্যাপারে কিছুই বলা নাই।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেছেন, "হিন্দু আইনে হিজড়া সন্তানদের বাবা মায়ের সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার ব্যাপারে কিছু নেই। বিষয়টাতে আলোচনা প্রয়োজন।"

দু'জন আইনজীবীই আইনের অস্পষ্টতাকে বড় সমস্যা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

হিজড়া কালচার

হিজড়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী 'বন্ধু'' নামের একটি সংগঠনের তানভীর ইসলাম বলেছেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তারা প্রতিদিনই নানা অভিযোগ পেয়ে থাকেন। এসব অভিযোগের বড় অংশই বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ না পাওয়ার বিষয়ে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, "সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা বাড়ি ছাড়া হয়ে হিজড়া কালচারে যুক্ত হয়। হিজড়ারা ১০ বা ১৫ জন মিলে একজনকে গুরু মেনে তার অধীনে একসাথে কোন বস্তিতে বা কোন বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে।"

"তারা ঈদ, বাংলা নববর্ষ বা কোন উৎসবে মানুষের কাছে চাঁদা তোলে এবং এলাকায় কোন পরিবারে সন্তান হলে সেই বাড়িতে গিয়ে চাঁদা নেয়। এই অর্থ এনে তারা গুরুকে দেয়। সেই অর্থ দিয়ে গুরু সবার খাওয়া এবং বাড়ি ভাড়া দেন। এটা হিজড়া কালচার হিসাবে পরিচিত। সম্পত্তি এবং পরিবারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তাদের এই পথে নামা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।"

মি. ইসলাম বলেছেন, হিজড়ারা পরিবারে লড়াই করে যখন হেরে যায়, তখন তারা আর আইনের আশ্রয়ও নেয় না। কোন ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ানোর নজিরও সেভাবে নেই। তবে এখন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে তাদের কিছু কাজের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। সেটা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন।

তিনি জানিয়েছেন, সরকারিভাবে আনুমানিক একটা পরিসংখ্যানে হিজড়ার সংখ্যা ১০ হাজার বলা হয়। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে দেশে হিজড়ার সংখ্যা তিন লাখের বেশি হবে।

তানভীর ইসলাম বলেছেন, দুই বছর আগে সরকারি গেজেটে হিজড়া একটি লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও তাদের ভোটার হওয়ার অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে বলা হয়েছে। তবে সরকারি গেজেটে স্বীকৃতির পর সম্পত্তির অধিকার পাওয়ার দাবি জোরদার হয়েছে। তারা সহ আরও কয়েকটি সংগঠন মিলে হিজড়াদের সম্পত্তির অধিকারের জন্য একটা আইনের দাবিতে আন্দোলন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, শহরের হাতে গোনা কিছু পরিবার হিজড়া সন্তানদের সম্পত্তির ভাগ দেয়। কিন্তু তিনি এমন দু'টি অভিযোগ পেয়েছিলেন, দু'জনের মেয়ে স্বভাব থাকায় তাকে মেয়ে সন্তান হিসাবে দেখিয়ে সম্পত্তির ভাগ দেয়া হয়েছে। তবে সেখানেও পরিবারের অন্য মেয়ে সন্তানের থেকেও তাদের ভাগে কম দেয়া হয়েছে।

অবশ্য হিজড়াদের বাবা মায়ের সম্পত্তির সমান ভাগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে ব্যাপারে হিজড়া জনগোষ্ঠী দৃশ্যমান এবং কার্যকর পদক্ষেপ চায়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, মুসলিম শরিয়া আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন। এর বাইরে তিনি এখন বিস্তারিত কিছু বলেননি।



সরকারী ওয়েবে বলা হয়েছেঃ- 

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি

হিজড়া জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের  মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত  অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীর পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সর্বোপরি তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদেরকে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে সরকার এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপমতে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।

২০১২-২০১৩ অর্থ বছর হতে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে দেশের ৭টি জেলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। ৭টি জেলা হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা ,বগুড়া এবং সিলেট। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৭২,১৭,০০০/- (বাহাত্তর লক্ষ সতের হাজার) টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে নতুন ১৪ টি জেলাসহ মোট ২১টি জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোণা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, সিলেট। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪,০৭,৩১,৬০০ (চার কোটি সাত লক্ষ একত্রিশ হাজার ছয়শত টাকা)। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের কর্মসূচির বরাদ্দ ৪,৫৮,৭২,০০০.০০ (চার কোটি আটান্ন লক্ষ বাহাত্তর হাজার) । ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা।

  • স্কুলগামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪ স্তরে (জনপ্রতি মাসিক প্রাথমিক ৭০০, মাধ্যমিক ৮০০, উচ্চ মাধ্যমিক ১০০০ এবং উচ্চতর ১২০০ টাকা হারে) উপবৃত্তি প্রদান ;

  • ৫০ বছর বা তদুর্ধ বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল হিজড়াদের বিশেষ ভাতা জনপ্রতি মাসিক ৬০০ প্রদান ;

  • বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম হিজড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক  কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় আনয়ন ;

  • প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান।


“সময়ের আলো” পত্রিকায় বলা হয়েছেঃ-

শারাবান তহুরা। ব্যক্তিগতভাবে আমি ধার্মিক বলে এই নামটিই নিলাম। তাই এই নামটি রাখলাম। এর অর্থ পবিত্র পানীয়। জন্মের পর পরিবার আমার নাম রেখেছিল মশিউর রহমান। তবে আমার সম্প্রদায়ে আগে থেকেই আমি শরাবন নামে পরিচিত। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ও এই নামেই ভর্তি হই। 


রূপান্তরিত নারী শরাবন লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী হিজড়াদের মনোবেদনা বোঝেন। সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে ওই জনগোষ্ঠীর যোগসূত্র স্থাপনে কাজ করছেন তিনি। সাপোর্ট হিউম্যান অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার নামে একটি সংগঠন গড়ে এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।


সময়ের আলোকে তিনি জানালেন, দেশে রূপান্তরিত নারীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে তিনি একজন। হিজড়াদের সবার জীবনের ঘটনা প্রায় একই জানিয়ে বললেন, কতটা বাধ্য হয়ে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দাদির মধ্য থেকে পরিবার ছেড়ে তাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। পরিবার কতটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠলে হিজড়াদের ডেরায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়।


বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কোনো আইন প্রণয়ন করা যায়নি। কাজটি চলমান রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত না করা গেলে হিজড়াদের ভাগ্যের পরিবর্তন আসবে না। 


অযাচিত আক্রমণ বয়োসন্ধিকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন। হিজড়াদের নিয়ে গবেষণাধর্মী বহুল প্রশংসিত মঞ্চনাটক ‘শিখণ্ডী কথা’র নির্দেশক তিনি। ২০০২ সাল থেকে অনাদৃত হিজড়াদের মানবেতর জীবনকথা তুলে ধরছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত নাটকটি। এই দুই দশকেরও বেশি সময়ে হিজড়াদের অধিকার কতখানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা তাদের জীবনযাপনে কতখানি পরিবর্তন এসেছে, এ ব্যাপারে তার পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। একজন হিজড়ার হাঁটার বা জীবনাচরণের ধরন প্রাকৃতির বৈচিত্র্যের ব্যাপাার।


এটা স্বাভাবিক। এটাকে অস্বাভাবিকভাবে দেখা বরং আমার বা সমাজের প্রতিবন্ধিতা কি না, উল্টো এই প্রশ্নই করা যায়। তিনি বলেন, গত দুই দশকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। যেমন : এখন তাদের ব্যাপারে পাঠ্য বইতে পড়ানো হয়, তাদের এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) আছে, পাসপোর্ট হয়, ভাতা পাচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়েও এখন তাদের কাজে নেওয়া হচ্ছে।


পাশে থাকা উচিত পরিবারের


তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নজরুল ইসলাম ঋতু। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালে সরকার তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ১০ বছরে অগ্রগতি কী হয়েছে; এমন প্রশ্নের জবাবে ঋতু বলেন, অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। আমাদের লোক (হিজড়া) যে যেখানে আছেন, সবার উচিত হবে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। পরিবার বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা। সমাজের সঙ্গে থাকলে, সাধ্যমতো সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত থাকলে মানুষই বলবে যে কত্ত ভালো মানুষ।


তিনি বলেন, নিজে এগিয়ে গেলে সরকার বাকিটা করতে পারে। নিজের উদাহরণ থেকে তিনি বলেন, আমি সমাজের মানুষের সঙ্গে মিশতাম। সাধ্য অনুসারে সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতাম। তখন সমাজের মানুষইতো আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বলেছে। আমি নির্বাচিত হয়েছি। তারপর সরকার এখন আমার কথা পাঠ্যবইতেও উল্লেখ করেছে।


নজরুল হিজড়া নিজের বাবার উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমি ঢাকায় গিয়ে হিজড়াদের সঙ্গে মিশতাম। আবার বাড়িতেও আসা-যাওয়া করতাম। একসময় মানুষ এ কথা-সে কথা অনেক বেশি বলত। তখন আমার বাবাকে বললাম। বাবা বললেন, তুমি আমার সন্তান। কে কী বলল, তা শোনার দরকার নেই। তুমি আমার সংসারে থাকবে। তাই আমি মনে করি, সমাজের মানুষ যাই বলুক, পরিবারকে তা শক্তভাবে মোকাবিলা করতে হবে। 


‘হীনম্মন্যতা’ দূর করতে হবে


পরিস্থিতি বদলাতে হিজড়াদের ‘হীনম্মন্যতা’ দূর করার তাগিদ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^^বিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আরেক শিক্ষক আনন জামান। নিজের গবেষণা থেকে ২০০০ সালে ‘শিখণ্ডী কথা’ নাটকটি রচনা করেন তিনি, নাটকটির প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেন। গত দুই যুগের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে সময়ের আলোকে এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, আমরা শহুরে হিজড়া যাদের দেখছি, এদের অবস্থা যেটুকুই আছে, কিন্তু গ্রামীণ জনপদে থাকা হিজড়াদের অবস্থা একদমই ভালো না। তারা যে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, সেখান থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। তারা যে পড়াশোনা করাসহ সব কাজ করতে সক্ষম, মেধার কাজ করতে সক্ষম তা তাদের বিশ্বাসে আনতে হবে। আর রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে বুঝতে হবে যে, কেউ কারও যৌনতা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। এটা ঠিক করবে প্রকৃতি।


সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না


রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের জজ গলিতে থাকেন হিজড়া শিশির। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমি হিজড়া, তাই আশপাশের মানুষজন আমার বাবা-মা-ভাই-বোনকে নানা কথা শোনায়। আমার একটা ছোট বোন আছে। ওকে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু মানুষজন ভাববে যে, ওর ভাই হিজড়া, তাই ওকে ঘরের বউ করে নেওয়া উচিত হবে কি না? তার মানে আমার বোনটাকে বিয়ে দিতেও সমস্যা হবে। এসব কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি।


জজ গলির ২০১ নম্বর বাড়িটিতে শিশিররা ৮/১০ জন থাকেন বলে জানা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে শিশির বললেন, তার জানাশোনাদের মধ্যে কেউ সম্পত্তির অধিকার চেয়ে পাননি বলে জানা নেই তার।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিচরণ আনার কলি হিজড়ার। তারা ১৫-১৬ জন থাকেন নাজিম উদ্দিন রোডে। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, হিজড়ারা আসলে ভাবেনই না যে বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ পাবেন। তাই তারা সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার চেষ্টাই করেন না। অন্তত তিনি তেমন কাউকে জানেন না, যে বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ চাইতে গেছেন। একই ধারণা দিয়ে মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় রাস্তায় ভিক্ষা (তাদের ভাষায় কালেকশন) করা কয়েকজন হিজড়া বললেন, আসলে আমরা তো এইভাবে আছিই, খাইয়া-পইরা আছিতো। সম্পত্তির ভাগ চাইতে তো যাই নাই। কাউরে বাপ-মায়ের সম্পত্তির ভাগ চাইতে যাইতেও শুনি নাই।


আবাসন সমস্যা প্রকট


হিজড়াদের বড় আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আবাসন। এককথায় নানান দিক ভেবে বাড়িওয়ালারা তাদের বাসা ভাড়া দিতে চান না। জজ গলির বাড়িওয়ালার বিষয়ে শিশির বললেন, আমরা অনেক বছর ধরে এখানে আছি, বাড়িওয়ালাও আমাদের দেখছেন। নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমাদের বাসা ভাড়া দিলে কোনো সমস্যা নেই। তাই দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণত বাড়িওয়ালারা আমাদের তো বাসা ভাড়া দিতে চান না। আর আনার কলি বললেন, নাজিম উদ্দিন রোডে কয়েকটা বাড়িতেই হিজড়ারা থাকেন। সেটি পুরান ঢাকা এলাকা। সেখানে বহু বছর ধরেই হিজড়ারা আছেন। যে বাড়িওয়ালারা তাদের বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন, তারা তাদের পছন্দ না করলেও অপছন্দও করছেন না নিশ্চয়ই। তাই বাসা ভাড়া দিচ্ছেন বলে মনে করেন আনার কলি।


আলাদা সুরক্ষা আইন প্রয়োজন


জাতীয় পরিচয়পত্র আর পাসপোর্ট থাকলেও হিজড়াদের সুরক্ষার জন্য কোনো আইন নেই। ট্রান্সজেন্ডারদের প্রসঙ্গ তো নেই-ই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন সময়ের আলোকে বলেন, ট্রান্সজেন্ডার মানুষ পাবলিক প্লেসে এবং কর্মক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তাদের আইনি সুরক্ষাও নেই। যে কারণে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাটি ট্রান্সজেন্ডারদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়। আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ৩৭৭ ধারায় এসেছে প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ প্রসঙ্গ। এই ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোনো পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে এবং এর সঙ্গে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।


তাসলিমা বলেন, দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ট্রান্সজেন্ডার মানুষের কথা একেবারেই নেই। কয়েকটি জায়গায় বাইনারি লিঙ্গের পাশাপাশি অন্যান্য বা তৃতীয় লিঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য এটা সব জায়গায় নেই। এটাকে একেক জায়গায় একেকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উদাহরণ হাজির করে তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে হিজড়াকে ‘লিঙ্গ’ বলা হচ্ছে। হিজড়া তো কোনো লিঙ্গ পরিচয় হতে পারে না। ট্রান্সজেন্ডার মানুষের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনের কোনো নীতিমালাগত প্রক্রিয়া আমাদের নেই। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পুরোনো দণ্ডবিধি থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই বাইনারি লিঙ্গের বাইরে চিন্তা করা হচ্ছে না। তাই আলাদা ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইন প্রয়োজন আমাদের।


হিজড়াদের অধিকার নিশ্চিতে খসড়া আইন তৈরি হচ্ছে


হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে খসড়া আইন তৈরিসহ নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। সামগ্রিক কাজের সঙ্গে রয়েছেন সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহ জাহান। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সাধারণ মানুষের অবহেলা ও বৈষম্য দূর করতে ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। পরের বছর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর হিজড়াদের উন্নয়নে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছেÑশিক্ষা উপবৃত্তি, ভাতা, প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ উত্তর সহায়তা।


আমরা আইনের একটা খসড়া প্রস্তুতের কাজ করছি। সেখানে হিজড়াদের উত্তরাধিকার, শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসা সেবার অধিকারসহ সামগ্রিক বিষয় থাকবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে মো. শাহজাহান বলেন, এখন হিজড়ারা পঞ্চাশোর্ধ হলে ভাতা পান, খসড়া আইনে আমরা বলব হিজড়া হলেই যেন ভাতা পায়।


হিজড়া শনাক্তের প্রক্রিয়া প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ নিজেকে হিজড়া মনে করলেই তাকে হিজড়া হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মেডিকেল, মনোবিজ্ঞানী ও জেন্ডার এক্সপার্টসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে গঠিত একটা কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হবে খসড়া আইনে।


সংসদে সংরক্ষিত আসনের দাবি


গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজবাড়ী জেলা সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন শিশির বিন্দু। দেশের রাজনীতিতে এই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের কোনো মানুষ ছাত্রনেতা নির্বাচিত হয়েছেন। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, আমরা আইনি সুরক্ষা চাই। কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারি, পড়ালেখা সম্পন্ন করতে পারি, আইন করে তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ স্কুল জীবনেই যখন স্পষ্ট হতে থাকে যে, অমুক নারী-পুরুষের মধ্যে পড়েন না, তখন থেকেই তাকে ও তার পরিবারকে বিব্রত করতে থাকে চারপাশের মানুষ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও সংশ্লিষ্ট সবার স্বাভাবিক চিকিৎসা না দিয়ে এড়িয়ে চলার একটা প্রবণতা থাকে। তাই আইন করে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করতে হবে যেন শিক্ষা বা চিকিৎসাসহ কোনো অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে না পারে। 


কর্মক্ষেত্রে দুই শতাংশ হিজড়া নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ


হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ম্যানেজার (প্রশিক্ষণ) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, হিজড়াদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর বৃহৎ পরিসরে মাইলফলক কিছু কাজ হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে সব শিডিউল ব্যাংককে বলা হয়েছে যে, হিজড়াদের যেন কোনো জামানত ছাড়াই তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। আরেকটি হচ্ছে এনবিআর থেকে বলা হয়েছে যে, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি তার জনবলের অন্তত দুই শতাংশ হিজড়া নিয়োগ দেন, তাহলে তারা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কর রেয়াত পাবে। কিন্তু এর কোনোটিই বিভিন্ন অজুহাতে কেউ কার্যকর করেনি। বরং কেউ কেউ দুই-এক মাসের জন্য দুই-একজন হিজড়াকে নিয়োগ দিয়ে ছবি তুলে তা এনবিআরে দাখিল করে হয়তো কর রেয়াত সুবিধা নিয়ে থাকতে পারে। আমরা মাঠে গিয়ে দেখেছি যে, কোনো হিজড়াকে এই প্রজ্ঞাপনের আওতায় ঋণ দেওয়া হয়নি। ব্যাংকের শাখাগুলোতে গেলে বলে যে, আমাদের হেড অফিস থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আর এনবিআর থেকে নেওয়া পদক্ষেপটি উৎসাহমূলক, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। তাই আইন করে ২ শতাংশ জনবল নিয়োগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করলে এর সুফল পাওয়া যাবে।

দেশের সব নাগরিকের জন্য আইন সমান, তাই হিজড়াদের ক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রম নেই। হিজড়ারা (তৃতীয় লিঙ্গ) সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী।তাদের উত্তরাধিকার আইন নিশ্চিত করার জন্য ২০২০ সালে মন্ত্রিপরিষদ নির্দেশনা দিয়েছে। শরিয়া আইনেও তৃতীয় লিঙ্গের সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা- ২০১৩’ সরকার কর্তৃক প্রণীত হয়েছে মূলত তাদেরকে শিক্ষিত করে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার জন্য। হিজড়াদের পারিবারিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, বাসস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকার প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল।

এবছরের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ট্রান্সজেন্ডার এর সংখ্যা প্রায় ১২,৬২৯ জন। এই জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারার সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করে থাকে। তাদেরকে ট্রাফিক পুলিশের চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের বাস্তবায়নাধীন।

গতবারের বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে চাকুরী দিলে প্রতিষ্ঠানে কর্পোরেট করহারে ছাড়ের বিধান ছিল। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা অনেক হিজড়াদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভবঘুরে কেন্দ্রে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে হিজড়ারা থাকতে চান না। হিজড়াদের নিয়ে সরকারের প্রকল্পগুলো সফলতার মুখ দেখে না, কারণ তারা বর্তমান পেশা ছাড়তে আগ্রহী না।


এস.এম.আরিফ মন্ডল বিজ্ঞ আইনজীবী তিনি বলেছেনঃ-

দেশের সব নাগরিকের জন্য আইন সমান, তাই হিজড়াদের ক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রম নেই। হিজড়ারা (তৃতীয় লিঙ্গ) সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী।তাদের উত্তরাধিকার আইন নিশ্চিত করার জন্য ২০২০ সালে মন্ত্রিপরিষদ নির্দেশনা দিয়েছে। শরিয়া আইনেও তৃতীয় লিঙ্গের সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা- ২০১৩’ সরকার কর্তৃক প্রণীত হয়েছে মূলত তাদেরকে শিক্ষিত করে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার জন্য। হিজড়াদের পারিবারিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, বাসস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকার প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল।

এবছরের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ট্রান্সজেন্ডার এর সংখ্যা প্রায় ১২,৬২৯ জন। এই জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারার সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করে থাকে। তাদেরকে ট্রাফিক পুলিশের চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের বাস্তবায়নাধীন।

গতবারের বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে চাকুরী দিলে প্রতিষ্ঠানে কর্পোরেট করহারে ছাড়ের বিধান ছিল। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা অনেক হিজড়াদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভবঘুরে কেন্দ্রে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে হিজড়ারা থাকতে চান না। হিজড়াদের নিয়ে সরকারের প্রকল্পগুলো সফলতার মুখ দেখে না, কারণ তারা বর্তমান পেশা ছাড়তে আগ্রহী না।

একটি পরিবারে স্বাভাবিক বাচ্চার মত হিজড়ারও জন্ম হয়। জন্মের পর স্বাভাবিক বাচ্চাটি পরিবারের সাথেই থাকে, আর তৃতীয় লিঙ্গের বাচ্চাটি জন্মের কয়েক বছর পর বিভিন্ন কারনে হিজড়া সম্প্রদায়ের কাছেই বড় হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে তৃতীয় লিঙ্গের বাচ্চাটির মধ্যে হিজড়াদের অমানবিক (!) আচরণগুলো পরিলক্ষিত হয়। তৃতীয় লিঙ্গের বাচ্চাটিকে মূল স্রোতধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাদের পরিবারেই সম্পৃক্ত করতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গ বাচ্চাটিকে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও সামাজিকভাবে সম্পৃক্ত সবাইকে স্ব- স্ব অবস্থানে সহযোগিতা করতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গের বাচ্চাটিকে তার পরিবারেই ঠাই দিতে হবে আর আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায় সরকার এবং ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের কোন উদ্যোগেই ফলপ্রসূ হবে না।

ঢাকা শহরে এমন একজন লোকও পাওয়া যাবে না তিনি হিজড়ার বিড়ম্বনায় পরেননি। প্রতিদিন বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে তারা বকশিসের নামে চাঁদা আদায় করে থাকেন। যদি আপনার সাথে কথাবার্তায় একটু নড়াচড়া হয় মুহূর্তে অশ্লীল ভাষায় গালি হজম করতে হবে। আর আপনাকে বেশি পছন্দ হলে দেখবেন আপনার শরীরের যেকোনো স্থানে তার হাত চলে গেছে! আর তাদের চাহিবা মাত্র টাকা দিলে আপনার সম্মান অটুট থাকবে। রিকশায় সহযাত্রী যদি আপনার প্রিয়তম লাজুক স্ত্রী/প্রেমিকা হয়, তবে হিজড়ার পোয়া বারো! এমতাবস্থায় আপনাকে টাকা দিতে হবে আর সাথে সাথে তার মনমোহিনী বানীও শুনতে হবে।

হিজড়ারা ঢাকা শহরে বকশিসের নাম করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করে আসছে। বিশেষত: রাস্তাঘাটে, পরিবহনের যাত্রী, দোকানদার,বাসা – বাড়িতে নবজাতক সন্তান জন্ম নিলে নিশ্চিত চাঁদা আদায় করে থাকে। হিজড়াদের এমন চাঁদা আদায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়ার শর্তেও তারা মানছে না। ক্ষেত্রবিশেষে হিজড়াদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় একটি ভবনে নবজাতকের জন্য দুটি পরিবারের কাছ থেকে চাঁদার দাবিতে ‘উৎপাত ও ভয়-ভীতি’ দেখানোর অভিযোগে চার হিজড়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগে এমাসেই উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের হলে চারজন হিজড়াকে গ্রেফতার করা হয়।

হিজড়াদের অযাচিত চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ‘আইন – শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২ এর ধারা ২(খ) এর সংজ্ঞাভুক্ত অপরাধ বিশেষত: ২(খ)(ঈ),২(খ)(উ) করলে পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও অপরাধ সংঘটনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা অপরাধ সংঘটন সম্পকে অবহিত আছেন এমন কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগে আদালত কোন অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করতে পারেন।

উল্লেখ্য, হিজড়ারা ভাসমান হওয়ায় তাদের নাম ও ঠিকানা জোগাড় করা সম্ভব হয় না। উপর্যুক্ত আইনের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য (cognizable) তাই হিজড়ারা চাঁদাবাজি সহ অন্যান্য অপরাধের চেষ্টা করলে তাদের হাতে-নাতে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে মামলা দায়ের করতে পারেন।

নবজাতক জন্ম নিলে বকশিসের নামে চাঁদাবাজি করতে সাধারণত বাসা বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে টাকাসহ, মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কথিত হিজড়ারা দলবদ্ধ ভাবে যেকোনো সময় বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাদের শক্তির মহড়া বা দাপট প্রদর্শন করে ভয়-ভীতি বা ত্রাস সৃষ্টি বা বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থাকে। পুলিশের কাছে সহযোগিতার জন্য ৯৯৯ ফোন দিয়ে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ আত্মরক্ষা করতে পারেন।

হিজড়ারা সামাজিক অস্বস্তিমূলক যে সকল কর্ম করে থাকে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়ছে। পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে ক্ষান্ত না হয়ে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে হিজড়াদেরকে সামাজিক বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা যাবে। পদক্ষেপগুলি হচ্ছে, হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ প্রদান করা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নাগরিক হিসেবে মানবাধিকার নিশ্চিত করা, জনগণের মধ্যে হিজড়াদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ হিজড়ারা যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পায় তাহলে হিজড়াদের দ্বারা সংগঠিত এহেন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হবে। কারণ, হিজড়াদেরকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য। সরকার প্রদত্ত সকল ধরনের সামাজিক সুযোগ সুবিধা হিজড়াদের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশে মোট হিজড়ার সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের মতো। সুতরাং তাদেরকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে জনমনে হিজড়া নিয়ে যে অস্বস্তি রয়েছে তা আর থাকবে না। বর্তমান সরকার হিজড়াদের মানোন্নয়নে বেশকিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন হলে সুফল দেখতে পারবো আমরা। তবে এ বিষয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের দায়ও কোন অংশে কম নয়। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সুবিধাগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেদের যথার্থতাকে সমাজের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। তাহলেও জনজীবনে হিজড়া সম্প্রদায় কর্তৃক আহুত অস্বস্তিগুলো অচিরেই দূরীভূত হয়ে যাবে।

এখন এর বিশ্লেষন করা যাকঃ-


প্রথমে আমরা হিজরাদের শিক্ষার বিষয় নিয়ে সরকারি ওয়েবে কি বলা হয়েছে তার কিছু অংশ তুলে ধরিঃ-

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি

২০১২-২০১৩ অর্থ বছর হতে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে দেশের ৭টি জেলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। ৭টি জেলা হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা ,বগুড়া এবং সিলেট। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৭২,১৭,০০০/- (বাহাত্তর লক্ষ সতের হাজার) টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে নতুন ১৪ টি জেলাসহ মোট ২১টি জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোণা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, সিলেট। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪,০৭,৩১,৬০০ (চার কোটি সাত লক্ষ একত্রিশ হাজার ছয়শত টাকা)। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের কর্মসূচির বরাদ্দ ৪,৫৮,৭২,০০০.০০ (চার কোটি আটান্ন লক্ষ বাহাত্তর হাজার) । ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ৫.৫৬ কোটি টাকা।

  • স্কুলগামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪ স্তরে (জনপ্রতি মাসিক প্রাথমিক ৭০০, মাধ্যমিক ৮০০, উচ্চ মাধ্যমিক ১০০০ এবং উচ্চতর ১২০০ টাকা হারে) উপবৃত্তি প্রদান ;

  • ৫০ বছর বা তদুর্ধ বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল হিজড়াদের বিশেষ ভাতা জনপ্রতি মাসিক ৬০০ প্রদান ;

  • বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম হিজড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক  কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় আনয়ন ;

  • প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান।

আসলে কি বস্তবে এখন কোন স্কুলে হিজরাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন হিজরা শিশু স্কুলে লেখা পড়া করতে পেরেছে। এটা কোন দিনও সম্ভব না। কারন আমাদের সমাজ। আমাদের সমাজ এখনও পুরোপুরি হিজড়াদের মেনে নিতে পারেনি। স্কুলে যদি কোন মেয়েলি সভাবে ছেলে বা হিজড়া যায় তখন অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরা তাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা ও ব্যঙ্গ করতে থাকে। 

হ্যা! হিজারাদের শিক্ষিত করা সম্ভব, কখন! যখন তাদের জন্য আলাদা ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেকটি স্কুলে যদি তাদের জন্য আলাদা কক্ষ করা যায়। এর কারন আমাদের সমাজ হিজড়াদের মেনে নিতে পারে নি তাই অন্যান্য সাধারন বাচ্চারাও তাদের মেনে নিতে পারবে না। অনেক ছেলে মেয়েরাই তার সাথে বসতে চাইবে না। তাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করবে। শুধু ছাত্র/ছাত্রীরাই না শিক্ষকরাও তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা করে। 

অগেও তো এ কারনেই বর্তমানে যত হিজরা সম্প্রদায় আছে তারা স্কুলের গন্ডি পাড় করেনি। তাই যতদিনে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা করা না হবে তাদের কোন দিনও শিক্ষিত করা যাবে না। 

এরপর সম্পদঃ- 

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগির ক্ষেত্রে দেশটির প্রেক্ষাপট মিলিয়ে তাদের স্ব স্ব ধর্মের আইন ব্যবহার হয়ে থাকে।

ইসলাম ধর্মের মানুষের সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের আওতায়।

"মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। সন্তান মানে পুত্র এবং কন্যারা সম্পত্তির ভাগ পাবেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান এই আইনে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে বলা নাই। 

বাংলাদেশে হিন্দু আইনে ঐ ধর্মবলম্বীদের জন্য সম্পত্তির ভাগাভাগি যেভাবে হয়, তাতে কন্যা সন্তানরাই বিয়ের পর বাবার সম্পত্তির ভাগ পান না। সেখানে হিজড়াদের ব্যাপারে কিছুই বলা নাই।

(পাকিস্তানের একটা প্রদেশে ইসলামী আইন বিশারদরা গবেষণা করে একটা ফতোয়া দিয়েছেন, যে হিজড়া সন্তানদের মধ্যে পুরুষ ভাবটা প্রবল, তাদেরকে পুরুষ সন্তান হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। আর যাদের মাঝে নারীর স্বভাব বেশি, তাদের কন্যা সন্তান হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এমন লক্ষণ বিবেচনা করে উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তির ভাগ সেখানে হয়।) এই কথটির সাথে আমি একমত। কারন হিজড়া কি মানুষ না। এরা কি বাবা মায়ের সন্তান না । এদের কি কোন মা-বাবা জন্ম দান করে নি। তাহলে তাদের কেন সম্পত্তির ভাগ দেওয়া হবে।

আমার মতে হিজড়াদের মেয়েদের নিয়মে সম্পদ ভাগ করে দেওয়া উচিৎ। বিশ্ব সংবিধানে এই আইন করা উচিৎ। কারন হিজড়া সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই নারী বেশে থাকে।

আবার অন্য ভাবে ধরা যায় একজন হিজড়ার মধ্যে বেশি থাকে মেয়েলি ভাব। তাদের স্বীকৃত মতে তারা মেয়েলি সভাব পায় এবং মেয়েদের মতো চলা ফেরা করতে তারা পছন্দ করে। এজন্যই তারা মেয়েদের ভাগ পাবে। কোন পরিবারে যদি হিজরা সন্তান জন্ম গ্রহন করে তাহলে তাকে মেয়ের ভাগে ভাগ করে দেওয়া উচিৎ।

সর্বপোরি যদি হিজড়াদের শিক্ষার ব্যবস্থা ও সম্পদ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহা হলে বর্তমানে হিজড়ারা তাহাদের জীবিকার জন্য যা করে। মানুষদের হায়রানী করে। সেটা বন্ধ হবে।  

0 Comments

Stories are made up of my own feelings and events that have happened to me.

My writing habit, I write everything down so that everyone can read what I wear.